রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪১ অপরাহ্ন

লাওসের সেই গ্রাম তৈরি পরিত্যক্ত বোমায়…..!!!

লাওসের সেই গ্রাম তৈরি পরিত্যক্ত বোমায়…..!!!

মার্ক ওয়াটসন: যুদ্ধ একটি ভয়ংকর বিষয় হলেও এটি আমাদের বাস্তব জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের ফলে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা টেলিভিশনে বিস্ফোরণ ও সৈন্যদের দেখে থাকি। যুদ্ধ পৃথিবী ও সমাজকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যারা জীবিত থাকে তারা যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেয়। যুদ্ধের আগে তাদের যে জীবন ছিল তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে এবং কখনো কখনো আমরা যুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এই কাজ করে থাকি আমি মার্ক ওয়াটসন। আমি নিউজিল্যান্ডের লিটেলটনের একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার। এ ছবিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাওসের খামুয়ান প্রদেশ থেকে তোলা হয়েছে। মার্ক এশিয়ার একটি সাইকেল ভ্রমণে অংশগ্রহণ করেছিল। যে (সাইকেল) ভ্রমণ চীন থেকে শুরু হয় এবং ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছায়। যে সফর করতে নয় মাস সময় লাগে। আমি চীন, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় সাইকেলে ভ্রমণ করেছি। যতদূর সম্ভব হয়েছে আমি গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পাহাড়ি পথ অতিক্রম করেছি। আমি (আমার এ ভ্রমণে) এমন মানুষও দেখেছি, যারা ছিল অতি আনন্দিত এবং দেখতে আমাদের দেশের মানুষের মতো। কিন্তু মার্ক যখন লাওসের এই এলাকায় প্রবেশ করে তখন কিছু জিনিস দেখে সে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়। আমার মনে এই কৌতুহল তৈরি হয়, কেন শহরের সর্বত্র বোমার অংশবিশেষ পড়ে আছে? বিভিন্ন জায়গায় বোমের খোসা, ব্যবহৃত মাইনের সিলিন্ডার, ব্যবহৃত বোমার অবশিষ্ট অংশ পড়ে আছে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ হয়। মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবন শেষ হয়ে যায়। পরে এ যুদ্ধ ভিয়েতনামে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ আমেরিকা ও ভিয়েতনাম সরকার এ যুদ্ধে নিজেদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। আমেরিকা ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত লাওসে ২০ লাখ টনেরও বেশি বোমা নিক্ষেপ করে। ৫ লাখ ৮০ হাজারটি হামলায় এসব বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বলা যায়, প্রতি ৮ মিনিটে একটি বিমানভর্তি বোমা নিক্ষেপ করা হয় যা দিনে ২৪ ঘণ্টা ধরে চলে এবং তা একটানা ৯ বছর স্থায়ী হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বোমা নিক্ষেপ করা হয় সেটি হচ্ছে লাওস।
কিন্তু মাইকের কাছে যেটি বিস্ময়কর লাগে সেটি যুদ্ধের ইতিহাস নয় বরং যুদ্ধ পরবর্তী ভিয়েতনাম পরিস্থিতি। বোমা হামলার সমাপ্তি ঘটার পর যখন সৈন্যরা তাদের ঘরে ফিরে যায় তখন দেখা যায় এক তৃতীয়াংশ বোমা কাদা-মাটিতে অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বোমার অবশিষ্ট অংশ ও খোসা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। গ্রামের দিকে ঘরের ফাউন্ডেশন তৈরি, গাছ লাগানোর জন্য টব, বালতি, পানি খাওয়ার গ্লাস ও গরুর গলার ঘণ্টা হিসেবে বোমার অবশিষ্ট অংশকে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একটি নৌকার ছবি যা বোমার অংশবিশেষ দিয়ে বানানো হয়েছে। এখানে দেখতে পাচ্ছেন, আমেরিকার নিক্ষেপকৃত বোমার অংশবিশেষ দিয়ে জ্বালানী সংরক্ষণের ট্যাংক বানানো হয়েছে। এখানে দেখুন সৃজনশীল প্রতিভাকে কেমনভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। যে বোমা মানুষের জন্য বিপদ ও কষ্ট বয়ে এনেছে সেই বোমার অবশিষ্ট অংশ দিয়ে এগুলো বানানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখজন ব্যাপার হল, কিছু বিপদ এখনো চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ হাজারের মতো মানুষ যুদ্ধের সময় পড়ে থাকা অবিস্ফোরিত বোমার আঘাতে হতাহত হয়েছে। এখনো অনেক অবিস্ফোরিত বোমা শহরের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখনো প্রায়ই এ ধরনের বোমা উদ্ধার হচ্ছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো বিস্ফোরিত হচ্ছে। সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা এসব বোমার অবশিষ্টাংশ এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। গ্রামের গরীব লোকেরা এগুলোকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছে।
বর্তমানে অবশ্য লাওস সরকার (বোমামুক্ত দেশ গড়তে) গ্রাম ও শহরগুলো থেকে এসব বোমা সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে পরিমাণ বোমা পড়ে আছে তাতে গোটা লাওসকে বোমামুক্ত করতে ১০০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। ততদিন এদেশের মানুষকে যুদ্ধের এই ধ্বংসাত্মক স্মৃতির সঙ্গে এভাবেই জীবন কাটাতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877